হেপাটাইটিস বি কেন হয়? হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করার উপায়
হেপাটাইটিস বি কেন হয়? হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করার উপায়। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (HBV) একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ যা লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই রোগটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা।
অনেক অনেক সমস্যার মাঝে এটি একটি এবং একজন ভাই আমাদের টিমকে ইমেল এর মাধ্যমে এই প্রশ্নটি করেছেন। তাই হেপাটাইটিস বি রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ, এবং চিকিৎসার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
হেপাটাইটিস বি কী?
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস লিভারের প্রদাহ সৃষ্টি করে যা দীর্ঘমেয়াদে লিভারের সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এই ভাইরাসটি রক্ত ও অন্যান্য শারীরিক তরলের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়।
হেপাটাইটিস বি কেন হয়?
ভাইরাস সংক্রমণ
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসটি মূলত রক্ত এবং শরীরের অন্যান্য তরলের মাধ্যমে ছড়ায়। এই ভাইরাসটি সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্ক, সংক্রমিত সুই বা সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে, ইনজেকশন ড্রাগ ব্যবহারকারীরা এবং ট্যাটু প্রাপ্তির সময় যদি সংক্রমিত সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয়, তাহলে এই ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
মায়ের থেকে সন্তানের সংক্রমণ
সংক্রমিত মা থেকে সন্তান প্রসবের সময় এই ভাইরাসটি নবজাতকের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। এটি প্রধানত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে একটি সাধারণ সংক্রমণ পদ্ধতি।
রক্ত পরিসঞ্চালন
সংক্রমিত রক্ত বা রক্তের উপাদান গ্রহণের মাধ্যমেও হেপাটাইটিস বি ছড়িয়ে পড়তে পারে। যে কোনো ধরনের রক্তদান বা রক্ত গ্রহণের আগে অবশ্যই সংক্রমণ মুক্ত নিশ্চিত করতে হবে।
নিয়মিত সংস্পর্শ
যারা হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত, তাদের সাথে নিয়মিত সংস্পর্শে থাকলে, যেমন একই বাড়িতে বসবাস বা একই সরঞ্জাম ব্যবহারের ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ
এই রোগের এর লক্ষণগুলি সাধারণত সংক্রমণের ১ থেকে ৪ মাস পরে প্রকাশ পায়। কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে দেওয়া হলো:
- জ্বর এবং ক্লান্তি
- পেটের ডান দিকে ব্যথা
- বমি বমি ভাব
- ক্ষুধামান্দ্য
- চোখ এবং ত্বকের হলুদ ভাব (জন্ডিস)
- গাঢ় প্রস্রাব
- চামড়ার রং পরিবর্তন
- জয়েন্টে ব্যথা
- অসুস্থতা অনুভব করা
হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করার উপায়
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
হেপাটাইটিস বি থেকে রক্ষা পেতে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:
- টিকা গ্রহণ: হেপাটাইটিস বি এর জন্য টিকা একটি অত্যন্ত কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। জন্মের পর শিশুকে টিকা দেওয়া হলে তা দীর্ঘমেয়াদে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।
- নিরাপদ যৌন সম্পর্ক: যৌন সম্পর্কের সময় কনডম ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- পরিস্কার সরঞ্জাম ব্যবহার: ট্যাটু বা শরীরে পিয়ার্সিং করানোর সময় শুধুমাত্র সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত।
- ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি: নিজের ব্যক্তিগত জিনিস যেমন টুথব্রাশ, রেজর, নেইল কাটার অন্যের সাথে শেয়ার না করা।
চিকিৎসা এবং চিকিৎসার উপায়
হেপাটাইটিস বি সংক্রমিত হলে কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে:
- এন্টিভাইরাল ওষুধ: কিছু এন্টিভাইরাল ওষুধ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করে।
- লিভারের যত্ন: সঠিক খাদ্যাভ্যাস, অ্যালকোহল পরিহার, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন লিভারকে সুস্থ রাখতে সহায়ক হতে পারে।
- নিয়মিত পরীক্ষা: নিয়মিত লিভার ফাংশন পরীক্ষা করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- হেপাটাইটিস বি ইমিউনোগ্লোবুলিন: হেপাটাইটিস বি ইমিউনোগ্লোবুলিন সংক্রমিত হওয়ার সাথে সাথেই দেওয়া হলে সংক্রমণ রোধে সাহায্য করতে পারে।
প্রাকৃতিক উপায়ে সুস্থ থাকা
- সুস্থ খাদ্যাভ্যাস: লিভারের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। তাজা শাকসবজি, ফল, এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- স্ট্রেস মুক্ত জীবনযাপন: মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগ ব্যায়াম এবং ধ্যান করতে পারেন।
- আদা ও মধু: আদা ও মধুর মিশ্রণ লিভারের সুস্থতার জন্য উপকারী হতে পারে।
লিভারের যত্ন
লিভারের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যদি কেউ হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত হন। কিছু পরামর্শ:
- অ্যালকোহল এড়ানো: অ্যালকোহল লিভারের ক্ষতি করতে পারে, তাই এটি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলা উচিত।
- সঠিক ওষুধ গ্রহণ: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ওষুধ গ্রহণ করা উচিত।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম: শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত।
হেপাটাইটিস বি একটি মারাত্মক রোগ হলেও সঠিক প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত এই রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
হেপাটাইটিস বি দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে, ভাইরাসটি শরীরে থেকে যায় কিন্তু সঠিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
হ্যাঁ, হেপাটাইটিস বি এর জন্য টিকা রয়েছে যা অত্যন্ত কার্যকর। নবজাতক থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের মানুষ এই টিকা গ্রহণ করতে পারেন। টিকা নেওয়া হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
ইনজেকশন ড্রাগ ব্যবহারকারীরা, যারা অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক করেন, হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত মায়ের শিশু, এবং যারা সংক্রমিত রক্ত বা রক্তের উপাদান গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।